ধর্মের রূপরেখা ও নাস্তিকতার গান

এখনকার সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ব্যাপার মনে হয় \”নাস্তিক \” ও \”ব্লগার \” কিন্তু আজ থেকে এক দুই বৎসর আগেও ব্লগার কাকে বলে তা অনেক উচ্চ শিক্ষিত মানুষকে পাচ মিনিট লেকচার দিয়ে বুঝাতে হত । আর নাস্তিক কি তা বেসিরভাগ মানুষের \”বাংলা ব্যাকারনের বিপরীত শব্দ \” আস্তিক – নাস্তিকেই \” সীমাবদ্ধ ছিল ।

কিন্তু থাবার ও অভিজিতের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ও গণজাগরণ মঞ্চের খিচুড়িতে আজ নাস্তিকদের হত্যা  আর ব্লগার ব্যাপারটি অনেক সমালোচিত ।

যে কোন ধর্মেই জান , মননের চর্চা না করেই তারা চর্চা শুরু করেন ধর্মের , শেষে অবচেতন ভাবে পুজো শুরু করা হয় কাবা, জিসাস,কিংবা বুদ্ধাকে । পৃথিবীর সকল প্রসিদ্ধ ধর্মের বেশিরভাগ অংশই বস্তবাদে অবচেতন ভাবে প্রভাবিত , কিন্তু যেখানে ধর্মের মূল উপপাদ্য অবস্তুবাদ ।

মানুষের অবস্তগত বিশ্বাসের সীমাবদ্ধতা তাকে বস্তুগত বিশ্বাসে ঠেলে দেয় , যার সাথে মুলত নাস্তিকতা বাদের কোন দার্শনিক ফারাক নেই ।বাস্তবিক ভাবে ধর্ম চর্চা কারি ধরমকারি কিংবা একজন অবিশ্বাসী — অবস্তুবাদের অনুভহুতি না নিয়েই একজন ধর্ম চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন আর অবিশ্বাসী  ধরমকারিরি পিছনে লেগে আছে । তথাকতিত ব্লাইন্ড বিলিভার এবং নাস্তিকদের মধ্যে কোন বাস্তবিক বা আদর্শগত বিভেদ নেই । মিলিটেন্ট আথেইস্ট রা নাস্তিকতার নামে ধরমদ্রোহিতা করছে আর  ফান্ডামেন্টালিস্ট তালিবান্ রা ইসলামের নামে ইসলাম কে অপমান করছে । এরা সবাই চরমপন্থি । এবং চরমপন্থিরাই চরম্পন্থির শিকার হচ্ছে ।

কিছুদিন আগের চার্লি হেবডো ম্যাসাকারে কয়েকজন কার্টুনিস্ট কে হত্যা করা হয় । এরা সবাই তথাকতিত মানব ধর্মের পূজারী যেখানে তারা ফ্রিদম অফ এক্সপ্রেশনের প্রাকটিস করছেন । যখন তাদের ফানের মূল উপপাদ্য বিষয় ধর্ম , যা লক্ষ কোটি মানুষের আবেগের অন্তর স্থলে ।  মুসলিম আর ক্রিশ্চিয়ান রা হজরত মুহাম্মদ আর জিসাস ক্রাইস্ট কে তাদের জীবনের থেকে বেশি ভালবাসে । যখন তাদের কে নিয়ে ব্যাঙ্গ করা হয় হাজারো ইমোশনের কেয়ার না করে শুধুমাত্র ধর্মের প্রতি ঘৃণার বশবর্তী হয়ে তখন গুটিকয়েক আবেগি তার ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ গুলির মাধ্যমে করলে ব্যাপারটা ব্যালেন্স হোলো বলেই মনে হয় ।

চার্লি হোব ডো ম্যাসাকারের পড় পোপ বলেছেন “ তুমি আমার কাছ থেকে পাঞ্চ আশা কর যদি তুমি আমার মাকে অপমান কর , এবং ধর্ম কে কখন এভাবে হেয় করা উচিত নয় “ ।

নাস্তিকতা ও ধরমহিনতা সম্পুরন আলাদা । নাস্তিকতা একটি সম্পূর্ণ দার্শনিক মতবাদ , নাস্তিক হতে হলে কোন আচার করতে হয় না যে এতে সমাজ তাকে স্বাধীনতা দিচ্ছে না । তাহলে নাস্তিক হলে তা ঢোল পিটিয়ে বলার তো কোন প্রয়োজন নেই । রাস্তায় সধাহারন মানুষ কে দেখে কেউ বুযহে না সে কোন ধর্ম বা মতবাদের,। নাস্তিক আছেন ভাল আছেন ব্যাক্তিগত ভাবে নাস্তিকতার চর্চা করুন । ধর্মবাদিদের সামনে ধর্ম নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বললে লাত্থি উশটা খাওয়া অস্বভাবিক না । সাধারন মানুষ এত কিছু বুঝে না ,কারন ওরা ধর্মও জানে না ঠিক মত, তাই মহানবী নিয়া উল্টা পাল্টা কথা বললে তারা অনেক হিংস্র হয়ে উঠতে পাড়ে ।একটাঁ কথা আসে না \” রোমে গেলে রোমান দের মত থাকতে হয় \” থাকেন মুসলিম দেশে , চিল্লা চিল্লির কি দরকার ?। ইভালুয়েশন থিউরির মত পরিবেশের সাথে ম্যাচ করেন তা না হইলে কিন্তু অস্তিত্ব নিয়া সঙ্কটে পইরা যাবেন ।ড র উইন এর কথা টা তো নাস্তিকদের অন্তত মেনে চলা উচিত  ।

নাস্তিক মানেই ধর্মদ্রোহী নয়

ব্লগে কিংবা ফেসবুকে কারা কারা ধর্মদ্রোহী কিংবা নাস্তিক তা সুধু ব্লগার রাই জানতো আগে । যার কারনেই ধর্মদ্রোহী নাস্তিকদের উপর চরমপন্থি দের হামলা বেরেই চলছে যা হয়ত শেষ পর্যন্ত অন্ধ তালেবানি পর্যায়ে গিয়ে ইসলামের নামে হত্যাজজ্ঞ্বের মিছিলে পরিণীত হবে   । আসিফ,অমি , থাবা সহ আরো অনেকেই অনেক আক্রমণাত্মক ভাষায় ইসলাম কে ও মহানবীকে অপমান করেছে । কিন্তু তার মাঝে অনেক ব্যাক্তিকেই কেবল বিধাতার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করছেন কিংবা লেখা লেখেছেন , যারা ধর্মকে সম্মান করেন ,কিংবা মানুষের অনুভূতি কে সম্মান করেন ।

নাস্তিকতা একটি দার্শনিক মতবাদ ,নাস্তিকতা মানুষের ভাবনার মাঝে বিরাজ করে । নাস্তিকতা আর ধরমদ্রোহিতা সম্পূর্ণ আলাদা

মূলত এথেইস্ট বাংলাদেশে অ ব্লগে পেগান মূর্তিপূজক নাস্তিক হিন্দুদের(আস্তিক হিন্দু রা নয় ) নাম চেঞ্জ করে লেখার প্রবনতা আছে এবং তার আক্রমণের শিকার হয় সবসময় ইসলাম । নাম বলব এ রকম অনেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে নিজেকে  খালিফা ভাবতে শুরু করেছেন , । যেখানে বেদ পরলেও হিন্দুধর্মের উদার উচ্চ দার্শনিকতা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় ।

ইসলাম এর বিষয় নিয়ে দারশনিক বিতর্ক নয় , ইসলাম বিদ্বেষী ফান ও নোংরা ভাষায় অভদ্রভাবে পোষ্ট গুলোর ৮০% দিয়ে থাকেন এক্স পেগান রা । এক্স মুসলিম নাস্তিক রা লেখেন বাকি ২০ পারসেন্ট পোস্ট ।,

আমাদের তথাকতিত আস্তিক বা মুসলিম সমাজের অধিকাংশই জানেন না আস্তিকতা বলতে কি বোঝায় , কিংবা তারা সিওর না তারা কিসে বিশ্বাস করেন । কিন্তু বেসির ভাগ ক্ষেত্রেই যদি জিগ্ব্বাস করেন উত্তর পাবেন তিনি অদৃশ্য ও আছেন উনি মাথার উপরে আকাশে ।

ধর্ম এক সংস্কৃতি যা কিছু প্রিন্সিপাল এর উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে । প্রত্যেকটি আব্রাহামিক রিলিজিয়ন এর বইগুলোর প্রধান বক্ত্যব্য পড় এবং চর্চা কর । কিন্তু কিছু প্রজন্ম যাওয়ার পড় জন্মগত ভাবে পাওয়া সংস্কৃতি তাদের মূল ধর্মীয় ভাবধারা হিসাবে গন্য হয় । যেখানে ভুলন্ঠিত হয় ইসলামের মূল উদ্দেশ্য

। এই রকম জ্ঞ্বান হীন ধর্ম বিশাস্ব এর জন্যই বাংলাদেশ এর মত মুসলিম অধ্যুসিত দেশে ইসলামের কনো বাস্তবিক অস্তিত্ব নেই । আর যা ছিল তা হারিয়ে যাচ্ছে সেকুলার বন্যায়। আর কত দিন

। আপনার আশে পাশের কিছু নামাজি মানুষকে জিজ্ঞ্বাসা করে দেখবেন সে নামাজের অত্যাবশ্যকীয় সুরা ফাতিহার অর্থ জানেন কি না । উত্তর আসবে ১০০ জনে জানেন একজন । একজন মুসলিম জানেন না দিনে ্পাচ বার মিনিমাম ৫০ বার তিনি কি পাঠ করে আসলেন। কিন্তু তিনি সিওর তিনি বেহেস্তে যাবেন । তার পক্ষে নামাজ ব্যাতিত যে কোন দুই নম্বরি কথা কাজ করা কোন ব্যাপার না , কারন তার কাছে নামাজ পাপ মোচনের উপায় ।

কিন্তু কুরআন  বলে তার উল্টো , পুস্তক বলে নামাজ নিজেকে পরিশুদ্ধির উপায় , নিজে নিজে প্রতিজ্ঞ্বা বধ্ব হওয়া আর নিজের সাথে নিজের ধ্যান করা । কিন্তু কজন জানে । কজন এত ব্যাস্ততার মাঝে পড়েছে কোরআনের পুড়ো অনুবাদ ।

পাচ বৎসর ধরে ফেসবুক বিভিন্ন আথেইস্টিক মেন্টালিটির গ্রুপ,বিভিন্ন ব্লগে,অনেক ব্লক খেয়ে নামে বেনামে থেকে অনেক অবিশ্বাসী দের সাথে তর্ক যুক্তি আর হীটেড কথা বার্তার ওনেক কিছু শিখেছি , শিখিয়েছি এবং শিখছি । নিজের বিশ্বাসের পরিবর্তন আমাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করে , আমার লেখা নাস্তিক , এগনোস্টিক, যুক্তিবাদী মানুষ  দের উদ্দেশ্যে । প্রথাগত মুসলিম সমাজ আমার লেখায় আঘাত পেলে কিছুই করার নেই ।

মুলত অনেক কারনে মানুষ নাস্তিক হয় ।আমার অব্জারভেশনে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক আস্তিক কখন নাস্তিক হয়

  • ১) অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে ।
  • ২) এক ধর্মের সাথে আরেক ধর্মের বিভেধ , বিগত ক্রুসেড ,কিংবা নতুন জঙ্গিবাদ সাথে ধর্মের সম্পর্কে চিন্তা করে ।
  • ৩)মানব সমাজে সামাজিক বা অর্থনৈতিক বিবেধ।
  • ৪) হঠা ৎ কোন প্রিয় মানুষের মৃত্যু ।
  • ৫) রিচারড ডকিংস এর\” দ্যা গড ডিলিউসন \” কিংবা ডারউইন বা স্টিফেন হকিংস এর মেটারিয়ালিস্টিক ধারনার বই , কিংবা প্রবন্ধ পড়া এবং তা সম্পর্কে প্রশ্ন না করা ।
  • ৬) ভাব আবেগ কে মেশিন বা অঙ্ক করে দিয়ে প্রকাশ বা প্রমানের চেষ্টা ।
  • ৭) নাস্তিকতা কে স্টাইল হিসাবে নেওয়া ( ভাব নেওয়ার জন্য )
  • ৮) প্রার্থনার উত্তর না পাওয়া ।
  • ৯)সঠিক ধর্মীয় শিক্ষার অভাব কিংবা ধর্ম সম্পর্কে জানার উৎস না থাকা ।

আরো অনেক কারন বিদ্যমান , যা এক সময় একেক জনের জন্য কাজ করে ।প্রত্যেকটি কারন কিংবা দার্শনিক ব্যাখা অনেক ব্যাপক । এটি হয়ত অন্য কোন পোস্টে কিংবা ভবিষ্যৎ বইয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করব

 আজাকাল অনেক কে বলতে শুনি নাস্তিকতা সামাজিক ব্যাধি।

কিন্তু বর্তমানে যেভাবে নাস্তিকদের ফাসি চাওয়া হচ্ছে তার দিকে ইসলামপন্থী ব্লগার দের যে প্রচারনা চলছে সবজায়গায় তা অত্যান্ত ভয়ঙ্কর । ্মত প্রকাশের জন্য কেউ সরবেচ্চ শাস্তি পেতে পাড়ে না । তবে যারা মহানবী নিয়ে ব্যাঙ করত চটি লিখত তাদের শাস্তি প্রয়োজন । তারা মিথ্যাচারের জন্য ক্ষমা চাইতে বলা জেতে পাড়ে । কিন্তু নাস্তিকতার জন্য শাস্তি দেওয়া হবে অবিচার । কোন মানুষ তার বিশ্বাসের জন্য শাস্তি পেতে পাড়ে না । কোন একজন নাস্তিক তার জন্য আমাদের মত ভণ্ড মুসলমানরা দায়ি । কেননা আমারা তাকে দিতে পারিনি যুক্তি কারন \”নাস্তিকদের সাথে কথা বললে নাকি ঈমান থাকে না \” আমরা তাকে কাছে ডেকে বুযহাইনি দূর থেকে বলে গেছি \” শালা নাস্তিক \”

ধর্মের আর সামাজিক আচার আমদের চিন্তার পরিধিকে করে কুক্ষিগত। যার ফলে ব্লাইন্ড বিলিভারদের আগমন ও রাজত্ব।ধর্মের আচার এর প্র্যাকটিস করতে করতে সৃষ্টিকর্তাকে অনুধাবনের প্রজ্ঞ্বা সৃষ্টি হয় না । ইসলামিক মাদ্রাসা শিক্ষার সীমাবদ্ধতা এমন কিছু ব্যাক্তিকে সম্মানের কিংবা জ্ঞ্বানের একমাত্র খুটি বানিয়ে ফেলে যাদের বেসিরভাগের মধ্যে নেই ধর্ম আর সৃষ্টিকর্তা নিয়ে দার্শনিক কোন ভাবধারা । সৃষ্টিকর্তা কে ভালবাসার বদলে তারা আমাদের শিখান কিভাবে তাকে ভয় করতে হবে , জাহান্নামে কত আগুন আর কত হুরের বন্যা । আমি ব্যাক্তিগত ভাবে অগণিত মাওলানাদের সাথে কথায় কেবল পেয়েছি অজ্ঞ্বতা এবং তোঁতা পাখির মত বলে যাওয়া কিছু মুখস্থ আউরি ।হাতে গোনা কিছু বিজ্ঞ্ব মুফতি মাওলানা রয়েছেন যারা প্রথাগত মাদ্রসা শিক্ষার বাইরে নিজেকে স্বশিক্ষিত করেছেন ।

যারা ইক্টু রেশনালিটির প্র্যাকটিস করবেন কিংবা চিন্তা করবেন ধর্মের কোন একটা বিষয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে তারা খেই হারাবেন ।যেভাবে পাতি মোল্লাদের যুক্তি কথায় কথায় কোরান শরিফের আয়াত যা হয়ত প্রশ্নের সাথে একেবারেই সামঞ্জস্য রাখে না  ।

ধর্ম তার নিজ দোষে আজ সামজিক ব্যাধি। ধর্মের নামে কুকর্ম আর যুক্তিহীনতা তাদের মসজিদে গিয়ে পাচ ওয়াক্ত ঠোকর মারা মুরগির সমতুল্য করেছে। আর সৃষ্টি হচ্ছে হাজার কনফিডেন্ট নাস্তিক যারা এক সময় তথাকথিত মুসলিম ছিল ।

সেই আসহায় তথাকথিত আস্তিক আর কনফিডেন্ট নাস্তিকদের জন্য রইল ভালবাসা । বিধাতার বিশাল ভালবাসার রাজত্বে আসার নিমন্ত্রন রইল।চোখ বন্ধ করুন ,খুজুন নিজের ভেতর নিজেকে ,দেখবেন বিধাতা আপনার অস্তিত্বে ।